দাঁড়ি কাটা ও দাঁড়ি শেভ করা মুসলিমদের জন্য হারাম

দাঁড়ি কাটা ও দাঁড়ি শেভ করা মুসলিমদের জন্য হারাম.




আল-কুরআন ও সুন্নাহর এবং আলেমদের অভিমতের সার-সংক্ষেপ হলো দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব। দাঁড়ি শেভ করা বা কাটা হারাম ও নাজায়েয। কেননা রাসূলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশ দ্বারা এখানে ওয়াজিব বুঝায়।

দাঁড়ি রাসূলুল্লাহ ﷺ এর আদর্শ। আদেশ, আমল এবং স্বীকৃতি ইত্যাদি সর্বোতভাবে তিনি বলেছেন দাঁড়ি বড় করার কথা। সেহেতু এটা কামিয়ে ফেলা তাঁর সম্মানিত আদর্শ তথা জীবনাচরণের প্রতি চরম অবমাননা।

দাঁড়ি শেভ করলে আল্লাহর সৃষ্টিকে বিকৃত করা হয়, যা করতে তিনি নিষেধ করেছেন। মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন মানবের সেরা শত্রু দুষ্ট ইবলিশ শয়তান বলল: “(শয়তান বলল) আর অবশ্যই আমি তাদেরকে নির্দেশ দিব, ফলে তারা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে”। [সূরা: আন-নিসা, আয়াত: ১১৯]

আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করা দ্বারা বুঝায়, যে সব নারী শরীরে উল্কি আঁকে ও ভ্রু কাটে এবং দাঁড়ি কাটে সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য এবং আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে। আল্লাহ্ তা’য়ালা এটি নিষেধ করেছেন। [বুখারী, আস-সহীহ: ৪৮৮৬]

আলেমদের মতে দাঁড়ি শেভ করা অথবা কাটছাট করে ষ্টাইল করে রাখাও আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করার মতো কাজ, যা হারাম। শেখ আলী মাহফুয আল আযহারী বলেন: চার মাযহাবের আলেমগণ একমত যে দাঁড়িকে ঘন রাখা ওয়াজিব, শেভ করা হারাম। প্রসিদ্ধ চার মাযহাবের ফিকহবিদগণও দাঁড়ি ছেড়ে দেওয়া ওয়াজিব ও কেটে ফেলা বা শেভ করাকে হারাম বলে মত প্রকাশ করেছেন।

দাঁড়ির ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম ও সালাফে-সালেহীন তথা আমাদের নেককার উত্তরসূরীরাও আমাদেরকে সঠিক পথ নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। তাদের কেউই দাঁড়ি শেভ করতেন না। দাঁড়ি শেভ করা আল্লাহর অবাধ্যতা।

মহান আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেন: “আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোনো বিষয়ের ফায়সালা দিলে কোনো মুমিন পুরুষ কিংবা মুমিন নারীর জন্য সে ব্যাপারে তাদের নিজেদের কোনো রকম (ভিন্ন সিদ্ধান্তের) ইখতিয়ার থাকবে না। আর যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নাফরমানী করল, সে নিঃসন্দেহে সুস্পষ্টভাবে গোমরাহ (পথভ্রষ্ট) হলো”। [সূরা: আল-আহযাব, আয়াত: ৩৬]

দাঁড়ি মুণ্ডানো বা ছাটা উভয়টিই গোনাহের কাজ। এটি মজুসী বা অগ্নি পূজাকারীদের কাজ। আর নবী ﷺ আমাদেরকে বিজাতি অমুসলিমদের অনুকরণ করতে নিষেধ করেছেন। হাদিসে শরীফে এসেছে–

আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “যে ব্যক্তি কোনো জাতির সাদৃশ্য গ্রহণ করে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে”। [আবূ দাঊদ, আস-সুনান: ৩৫১২, শাইখ আলবানী বলেন হাদিসটি হাসান সাহীহ ৩৪০১। হাদিসটিকে শাইখ আলবানী অন্যত্র সহীহ বলেছেন হিযাবুল মারআ আল-মুসলিমা: পৃ. ১০৪]

➤ মোচ না কাটার ব্যাপারে কঠিন সাবধানবাণী:

শাইখ ইবন বায (রাহি.) বলেছেন: মোচ কাটাও ওয়াজিব। মোচ ভালো করে কেটে নেওয়া উত্তম। এর অর্থ মোচ শেভ করা নয়। লম্বা-ঘন মোচ রাখা নাজায়েয ও গোনাহের কাজ। এটা করলে নবী ﷺ এর কথা ও কাজের বিরোধিতা করা হয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ এর হাদীসে মোচ কাটতে বলা হয়েছে কামিয়ে ফেলতে বলা হয় নি।

রাসূলুল্লাহ ﷺ এর যা আদর্শ নয় তা কখনও গ্রহণযোগ্য নয়। রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “যে কেউ এমন আমল করবে যা করতে আমরা নির্দেশ দেইনি, তা প্রত্যাখ্যাত”। [মুসলিম, আস-সহীহ: ১৭১৮]

সাহাবী যাইদ ইবনুল আরকাম (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “যে মোচ ছোট করে ছাটে না, সে আমার উম্মতের অর্ন্তভুক্ত নয়”। [তিরমিযী, আস-সুনান: ২৭৬১, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং: ২৭৩৮]

ইয়েমেনের শাসকের পক্ষ থেকে দু’জন লোক আল্লাহর রাসূল ﷺ এর নিকট এল। তাদের দাঁড়ি মুণ্ডানো ছিল এবং মোচ লম্বা ছিল। তাদের চেহারার দিকে তাকাতেও আল্লাহর রাসূলের কষ্ট হচ্ছিল। তিনি তাদেরকে বললেন: তোমাদের মরণ হোক! এ কাজ করতে কে তোমাদেরকে বলেছে? তারা বলল, আমাদের প্রভু (কিসরা) আমাদেরকে আদেশ করেছেন। আল্লাহর রাসূল ﷺ বললেন: “কিন্তু আমার রব আমাকে আদেশ করেছেন দাঁড়ি লম্বা রাখার ও মোচ খাটো করার”। [আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া (৪/২৭০) দারুল ফিকর সংস্করণ]

ইমাম কুরতুবী (রাহি.) বলেন: দাঁড়ি শেভ করা বা উঠিয়ে ফেলা বা কাট-চাট করে ষ্টাইল করে রাখা নাজায়েয। দাঁড়ি রাখা বাড়িয়ে ও ঘন করে রাখা ফরজ। দাঁড়ি শেভকারী তার এ গোনাহকে সবার সামনে প্রকাশ করে যা অতি কঠিন হারাম কাজ। 

হাদীসে রয়েছে, রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেন: “আমার উম্মতের সবাইকে আল্লাহর রহমতে মাফ করা হবে, তবে তারা ব্যতীত যারা গোনাহ ও নাফরমানীকে সকলের কাছে প্রকাশ করে বেড়ায়”। [বুখারী, আস-সহীহ: ৬০৬৯]

➤ হাদিসের আলোকে দাঁড়ির পরিমাপ:

দাঁড়ি এক মুষ্টি বা চার আংগুল পরিমান লম্বা রাখতে হবে। এক মুষ্টির কম রাখা বা একেবারে তা মুণ্ডিয়ে ফেলা সর্বসম্মতিক্রমে হারাম এবং কবীরা গুনাহ।

শরী‘আত প্রবর্তক কর্তৃক কোনো বিষয়ের প্রতি সাধারণ নির্দেশ আসলে তা পালন করা ওয়াজিব এবং বিপরীত করা হারাম। এছাড়া সাহাবা, সালাফে-সালেহীন এবং ফক্বীহগণের দাঁড়ি রাখার নিরবছিন্ন আমল এবং তাদের বিভিন্ন উক্তিসমূহের দ্বারা এক মুষ্টি পরিমাপ লম্বা দাঁড়ি রাখা ওয়াজিব এবং এর বিপরীত করা হল হারাম।

রাসূলুল্লাহ ﷺ, সাহাবায়ে আজমা‘ঈন, তাবেঈ, তাবে-তাবেঈ, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন, চার মাযহাবের সকল ইমাম ও বুযুর্গবৃন্দ, আহলে হাদীস, আহলে যাহেরের আলেমগণ দাঁড়ি এক মুষ্টির চেয়ে বেশি বা কমপক্ষে একমুষ্টি বা ৪ আঙ্গুল রাখাকে ওয়াজিব কিংবা আবশ্যিক সুন্নাহ বলেছেন।

নবী মুহাম্মাদ ﷺ এর উম্মত হিসেবে কমপক্ষে এক মুষ্টি বা চার আংগুল বা কিছুটা লম্বা দাঁড়ি রাখা একজন মুসলিমের অবশ্যই কর্তব্য। কারণ এটা মুসলিমের পরিচয় বহন করে।

হাদিসের কিতাবে পাওয়া যায়, আবূ হুরায়রা (রা.) তার দাঁড়ি মুঠ করে ধরতেন। এরপর এক মুষ্ঠির অতিরিক্ত অংশ কেটে ফেলতেন। [মুসান্নাফ ইবন আবী শাইবা ১৩/১১২, হাদীস নং: ২৫৯৯২, ২৫৯৯৯]

আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) যখন হজ্জ কিংবা ওমরা করতেন, তখন দাঁড়ি মুঠো করে ধরতেন এবং মুঠোর বাহিরের যা বেশি হত তা কেটে ফেলতেন। [বুখারী, আস-সহীহ: ২৭৪৩]

জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: “আমরা হজ্জ ও উমরা ছাড়া সবসময় দাঁড়ি লম্বা রাখতাম।”। [আবূ দাঊদ, আস-সুনান: ৪১৫৫]

নাফে‘ (রাহি.) বলেন, আবদুল্লাহ ইবন উমার (রা.) মুষ্টির অতিরিক্ত দাঁড়ি কেটে ফেলতেন। [ইবন আবী শাইবাহ, হাদীস নং: ২৫৯৯৭]

হাসান বসরী (রাহি.) বলেন, তারা (সাহাবী-তাবেঈন) মুষ্টির অতিরিক্ত দাঁড়ি কাটার অবকাশ দিতেন। [প্রাগুক্ত ১৩/১১২, হাদীস নং: ২৫৯৯৫]

দ্বীনের স্বার্থে পোস্টটি আপনার ওয়ালে শেয়ার বা যত খুশী কপি করতে পারেন। অনুমতি নেয়ার প্রয়োজন নেই। কেউ এটি দেখে আমল করলে তা আমাদের জন্য ইনশাআল্লাহ সাদকায়ে জারিয়া হিসাবে গণ্য হবে।

No comments:

Post a Comment

Thanks A Lot For Visit my Islamic Blog .